চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বছরের প্রথম দিনই ‘বই উৎসব’। বিনামূল্যে নতুন বই পাবে শিক্ষার্থীরা। এই ‘বই উৎসব’ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। কেননা এখনো শতভাগ বই এসে পৌঁছেনি চট্টগ্রামে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে ২২ শতাংশ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ শতাংশ বই পাওয়া গেছে। শতভাগ বই পেতে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।
বই না পাওয়ার মূল কারণ এখনো পর্যন্ত চাহিদার অর্ধেক অংশই ছাপাতে পারেনি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’(এনসিটিবি)। আর এ কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধেক বইও আসেনি চট্টগ্রামে। এরপরও নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হলেও বইয়ের ‘মান’ভালো না হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানিয়েছেন— সময়মতো সব বই পেতে মানের সঙ্গে ‘আপস’ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তারপরেও বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে, শতভাগ বই পেতে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।
জানা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি বই ছাপানোর কাজ চলছে। এবার প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ও শিক্ষক গাইড দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিক স্তরের প্রায় অর্ধেক (৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ) বই এখনো ছাপা হয়নি। আর মাধ্যমিকে ছাপা বাকি ৩১ শতাংশ বই। এরমধ্যে গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ে ২২ শতাংশ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ শতাংশ বই পাওয়া গেছে। বাকি ৫ দিন সময়ের মধ্যে সব বই পাওয়া যাবে না বলেও আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের। যদিও তারা বিষয়টি পুরোপুরি মানতে নারাজ।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য চট্টগ্রামের প্রাক-প্রাথমিকে নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২৯৭টি। এরমধ্যে বই এসেছে সাড়ে ১০ লাখের মতো। আর মাধ্যমিকে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৩টি। এরমধ্যে মাধ্যমিকের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২২৯টি। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৬টি। এছাড়া মাদ্রাসা পর্যায়ে (ইবতেদায়ী ও দাখিল) শিক্ষার্থীদের জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৬ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৮টি। হিসেবে চাহিদার অর্ধেক বইও আসেনি চট্টগ্রামে।
মাধ্যমিকে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ৪২ লাখ ৬২ হাজার ৫০৪টি। মাদ্রাসায় প্রাপ্ত বই ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬৩টি। সবমিলিয়ে বই এসেছে ৬৫ লাখ ১১ হাজার ৪৬৭টি। শতকরা হিসেবে প্রাপ্ত বইয়ের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এখনো বই বাকি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৬টি।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, প্রতিদিনই বই আসছে আমাদের। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমাদের চাহিদার ৪১ শতাংশ বই হাতে এসে পৌঁছেছে। আশা করছি নতুন বছরের আগে সব বই পেয়ে যাবো। আমাদের স্টুডেন্টরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।’
একই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী মনিটরিং অফিসার মো. নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘বন্ধের আগের দিন পর্যন্ত মানে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২২ শতাংশ বই এসেছে। হাতে এখনো কিছুদিন আছে। আশা করছি সময়ের মধ্যেই আমাদের সব বই চলে আসবে।’
প্রসঙ্গত, পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ দেরিতে দেওয়া, কাগজের মূল্যবৃদ্ধি, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ পাওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে মাস দুয়েক আগে থেকেই নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোতে শঙ্কা তৈরি হয়। আর কাগজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে নিম্নমানের কাগজ দিয়ে এবছর বই ছাপানো হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। যদিও বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।